Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

সেচের গভীর নলকূপ হতে পাইপের মাধ্যমে খাবার পানি সরবরাহ

সেচের গভীর নলকূপ হতে পাইপের মাধ্যমে খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প-৩য় পর্যায়

সার-সংক্ষেপঃ

বরেন্দ্র এলাকার ব্যতিক্রমী ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির উপর নির্ভর করে অত্রাঞ্চলে ভূ-পরিস্থ ও ভূ-গর্ভস্থ উভয় ক্ষেত্রে পানির দুষ্প্রাপ্যতা রয়েছে। অত্র এলাকার জনগণ খাবার ও গৃহস্থালি কাজে দুরবর্তী পুকুর, কুয়া, খাল-খাড়ি ইত্যাদি জায়গা হতে দুষিত পানি সংগ্রহ করত। বরেন্দ্র এলাকায় এটাই ছিল সাধারন চিত্র। বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ গ্রামাঞ্চলে সমন্বিত এলাকা উন্নয়নকল্পে ১৯৮৫ সালে অত্র অঞ্চলে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় কৃষি কাজে সেচ সুবিধার জন্য বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ গভীর নলকূপ স্থাপন শুরু করে। প্রকল্পের শুরু হতে অদ্যাবধি বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের অধীনে ১৪৭০০ এর অধিক গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।
বিশুদ্ধ পানির দুষ্প্রাপ্যতা পরিহারকল্পে বিএমডিএ পরীক্ষামূলক ভাবে গ্রামের সন্নিকটে অবস্থিত এমন সেচের গভীল নলকূপের পাশে ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ করে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করে। প্রাথমিক পর্যায়ে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার ১৩ টি উপজেলায় ২৬ টি খাবার পানির স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে কাজের অভিজ্ঞতাও এলাকার চাহিদার প্রেক্ষিতে একাধিক প্রকল্পের আওতায় কর্তৃপক্ষের ১৬ টি জেলাতে একইভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। প্রকল্পের শুরু হতে অদ্যবধি কর্তৃপক্ষের ১৬টি জেলায় সর্বমোট ১২৬৭ টি খাবার পানি সরবরাহ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে যার মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার প্রায় ১৩ লক্ষাধিক জনসাধারণ বিশুদ্ধ খাবার পানি পাচ্ছে। ফলে প্রকল্প এলাকায় জনগনের বিভিন্ন ধরনের রোগ বালাই বিশেষ করে পানি বাহিত রোগ উল্লেভযোগ্যভাবে কমে আসছে। কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খাবার পানি সরবরাহের এইরুপ সাফল্যের ডানিডা নামক একটি বিদেশী উন্নয়ন সহযোগী দাতা সংস্থা এই ধরনের প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য তাদের মনোভাব প্রকাশ করে এবং তাদের মাধ্যমেও এইরুপ ২০০টি খাবার পানির স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে উক্ত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় সেচের গভীর নলকূপ হতে পাইপের মাধ্যমে খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প-৩য় পর্যায় এর আওতায় ৫৫০টি স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
 

প্রকল্পটির কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্যাদি নিম্নে উল্লেখ করা হ’লঃ
মন্ত্রণালয়ঃ স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
বাস্তবায়নকারী সংস্থাঃ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(বিএমডিএ), রাজশাহী।
প্রকল্প ব্যয়ঃ ১১০৪৫.০০ লক্ষ টাকা
বাস্তবায়নকালঃ জুলাই২০১৩-জুন২০১৭।

প্রকল্প এলাকাঃ 
রাজশাহী বিভাগের ৫টি জেলাঃ রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া ও জয়পুরহাট(পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলা বাদে) জেলা। রংপুর বিভাগের ৮টি জেলাঃ রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্দা, দিনাজপুর. ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা।

পটভূমিঃ 
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বর্তমানে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায় কাজ করছে যার আয়তন ৩৪৫০০ বর্গ কিলোমিটার। এর পূর্ব প্রান্তে তিস্তা নদী এবং পশ্চিমে মহানন্দা ও পদ্মা নদী দ্বারা বেষ্টিত। এই এলাকাটি সমুদ্র পৃষ্ট হতে১৫ মিটার হতে ৪০ মিটার পর্যন্ত উচু। এলাকার ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া, তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকা হতে পৃথক। এই অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ সেঃ হতে ৪৪০ সেঃ পর্যন্ত বিরাজ করে এবং বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত ১২০০ মিমি হতে ১৫০০ মিমি পর্যন্ত। পূর্বে বরেন্দ্র এলাকায় প্রচুর পুকুর, কুয়া,জলাধার ছিল এবং এ সকল জলাধার দীর্ঘ সময় পর্যন্ত মজা/বন্ধ চিল। এলাকার জনগন এই সমস্থ পুকুর, নালা, কুয়ার দুষিত পানি ব্যবহার করত।
এলাকার মহিলারা দুর-দুরান্ত হতে পানি বহন করে নিয়ে আসতো যা ছিল অতি সাধারাণ একটি দৃশ্য। শুষ্ক মৌসুমে পানির দুষ্প্রাপ্যতা এত প্রকট হতো যে, পানি সংগ্রহকালে কখনো কখনো নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতো এমনকি কোন কোন সময় আইন শৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি ঘটতো।
বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি কাজ মুলতঃ বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল ছিল। কোন বছর বৃষ্টিপাত মেনভাবে না হলে কাঙ্খিত ফসল পাওয়া যেত না। এরুপ অবস্থা পরিহারের লক্ষ্যে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে কৃষি কাজসহ এলকার মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ গ্রহন করে। এরই ফলশ্রæতিতে ১৯৮৫ সালে গভীর নরকূপ স্থাপনপূর্বক ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে সেচ কাজে ব্যবহার করা শুরু হয় বর্তমানে কর্তৃপক্ষ অধ্যুষিত এলাকায় আবাদযোগ্য জমিতে বছরে তিনটি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।

প্রকল্প গ্রহণের কারণ ও উদ্দেশ্যাবলীঃ
ভৌগলিক অবস্থার কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূ-গর্ভস্থ স্তরের পানির অবস্থান বংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় নীচে অবস্থিত। এই অঞ্চলের অনেক স্থান হতে স্বাভাবিক নিয়মে পানি উত্তোলন করা যায় না। এখানে হস্তচালিত নলকূপের মাধ্যমে পানি উাত্তোলন করা য়ানা বললেই চলে। স্থান ভেদে বছরে সর্বোচ্চ ২-৩ মাস পানি পাওয়া যায়। এ সকল স্থানে সরকারীভাবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের মাধ্যমে তারা পাম্প, সেমি ডিপসেট নলকূপ স্থাপন করে ভূ-গর্ভস্থ স্তরের পানি উত্তলোন করে খাবার  ও গৃহস্থলির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবুও বছর জুড়ে অসেক ক্ষেত্রেই এই সকল নলকূপ কার্যকরী থাকে না। এছাড়া পানিতে আয়রন ও আর্সেনিকের মাত্র বেশী থাকায় তা খাবার উপযোগী হয় না। এ সমস্ত কারণে এলাকার জনগণ খাবার পানিসহ গৃহস্থালী কাজে ব্যবহারের জন্য সেচকাজে ব্যবহৃত গভীর নলকূপ হতে পানি সংগ্রহ করে অথবা গভীর নলকূপ না থাকলে নিকস্থ পুকুর, নালা বা কুয়া হতে পানি সংগ্রহ করে।
বরেন্দ্র এলাকায় উপরোক্ত বিষয়াবলী বিবেচনাকতরঃ বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ স্থাপিত গভীর নলকূপ হতে সেচের পানির পাশাপাশি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প গ্রহন করে এবং যার ফলে নি¤œবর্ণিত উদ্দেশ্যাবলী সাধিত হয়।
১। গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে স্বল্প ব্যয়ে সারা বছর সুপেয় পানি সরবরাহ করা।
২। গ্রামাঞ্চলে আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা।
৩। প্রকল্প এলাকার প্রায় ৫.৫০ লক্ষ জনসাধারনকে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা।
৪। সুপেয় পানি ও আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহের ফলে রোগ জীবানু রোধ করা।
৫। গ্রামীণ জনসাধারণের সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নতি করা।