প্রকৃতির রুপ বৈচিত্রের লীলাভূমি এই বাংলাদেশ। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। মাঠভরা সোনার ধান, নদীর কুলকুল ধ্বনি, পাখির কলতানে মুখরিত স্বপ্নের দেশ। ছোটবেলা পাঠ্য বইতে বাংলাদেশের রুপ বৈচিত্রের অপরুপ বর্ণণা এভাবেই আমরা পড়েছি। উল্লেখিত উপমার কোনটির সাথেই বাংলাদেশের এক চতুর্থাংশ জুড়ে অবস্থিত বরেন্দ্র অঞ্চলের তুলনা মেলেনা। বরেন্দ্র অঞ্চলের কথা মনে হলেই আমাদের মানষপটে ভেসে ওঠে লাল কংকরময় মাটির উচুনিচু ঠিলা, ছায়াহীন এক রুক্ষ প্রান্তর। দৃষ্টি মঅসায় রোদে পেড়া বিরাণ ফসলের মাঠ। কোথাও পানির দেখা নেই। চৈত্রের কাঠ ফাটা রোদে প্রাণ ওষ্ঠগত শীর্ষকায় কৃষক তার চেয়ে অধিক শীর্ণকায় তার হালের বলদ। দুরে-বহুদুরে তালগাছের উপস্থিতি, বাবলা আর ক্যাকটাসের বেড়া। এই হল বরেন্দ্র অঞ্চলের চেহেরা। কালের বৈরীতা আর পরিবেশ ধ্বসে মানুষের সীমাহীন অপরিনামদর্শী কর্মকান্ডের ফলে বরেন্দ্র অঞ্চল এক সময় হয়ে পড়ে মানুষের অবহেলা আর শোষেনের হাতিয়ার।
বরেন্দ্র অঞ্চলের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এই প্রাচীন জনপদের অতীত ঐতিহ্য বড় চমকপ্রদ এবং বিষাদময়। যুগে যুগে কালে কালে এই এলাকা বিভিন্ন জাতি গোষ্টির দ্বারা যেমন নিষ্পেষিত হয়েছে, তেমনি প্রকৃতির নানা রুদ্ররোদের শিকার হয়েছে এই এলাকার মানুষ। রুক্ষ ও কঠিন এই এলাকার উন্নয়নের জন্য অতীতে তেমন কোন বড় উদ্যোগ নেয়া হূনি। ভারত বিভাগের আগে উত্তর জনপদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পার্শ্ববর্তী শহর কোলকাতার সাথে সম্পৃক্ত ছিল। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর আর্থিক এবং বানিজ্যিক ভাবে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্তবির হয়ে পড়ে। ফলে দীর্ঘকাল ব্যঅপি এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা এক সীমাহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। সূদীর্ঘকাল ব্রঅপি বিপুল সম্ভাবনাময় এই অঞ্চল উন্নয়ন বঞ্চিত থেকে যায়।
আশি র দশকের প্রতমার্ধ হতেই বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের বিষয় বিভিন্ন ফোরামে আলোচনায় আসে। একটি অনুন্নত জনপদের উন্নয়নের জন্য “সমন্বিত এলাকা উন্নয়ন” কার্যক্রম অন্তভ‚ক্ত করে প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রচেষ্ট অব্যাহত থাকে। আঞ্চলিক বৈষম্যের নানা পরাকাষ্টায় প্রকল্প অনুমোদনের কার্যক্রম নানাভাবে বাধাগ্রস্থ হতে থাকে। এমনকি এক পর্যায়ে ১৯৮৩ সালের ১১ ই মে তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক প্রতিকায় উপসম্পাদকিয় তে চতুরঙ্গ তার কলামে লিখলেন এমন বহু প্রজেক্ট আছে যেগুলো নিছক রাজনৈতিক ট্যান্ডবাজির কারণে আমাদের মূমূর্ষ অর্থনিতির ঘাড়ে সওয়ার হয়ে আছে। এমন বহু প্রজেক্ট আছে যেগুলো অর্থনীতির অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য না হয়েও শ্বেতহস্থী প্রতিপালনের মহিমায় বহাল আছে। এসব অবান্তর অসম্ভব এবং দরিদ্র দেশের জন্য বিসদৃশ প্রজেক্ট যদি গৃহীত হতে পারে, বরেন্দ্র ভ‚মির জন্য সমন্বিত কোন কর্মসূচী কোন গৃহতি হতে পারবেনা, সেই প্রশ্ন অবশ্যই আসে। খাদ্যঘাটতির মোকাবেলায় এই ধরনের প্রশ্নমনে জাগা সাভাবিক। বরেন্দ্রভমি ৪০ লাখ ঠন খাদ্য উৎপাদনের সম্ভাবনা রাখে, এই সূত্রটি দরিদ্র দেশে উপেক্ষিত হলে তা হবেগুরুতর অপরাধ”(ইত্তেফাক ১১ই মে ১৯৮৩)। নানা ঘাত প্রতিঘাত অতিক্রম করে অবশেষে বরেন্দ্র অঞ্চলের গণমানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধনে ১৯৮৫ সালের ১৪ই জুন তারিখে বিএডিসির নিয়ন্ত্রনে “বরেন্দ্র সমন্বিত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প” সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়। বরেন্দ্র এলাকার মরুপ্রক্রিয়ারোধে বনায়ন, কৃষি ও সেচ ব্যবস্থা উন্নয়ন, যাতায়াত ব্যবস্থা, বিদুতায়ন ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে প্রকল্পটি এলাকার আর্থ-ামাজিক উন্নয়নের শুভ সূচনা করে। ফলশুতিতে ১৯৯২ সালে সরকার রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার ২৫ টি উপজেলা সমন্বয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রনাধীনে আলাদা স্বাত্বশাসিত সংস্থা “বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ” গঠন করে।
১৯৯২ সালে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জন্মলগ্ন থেকে অদ্যবধি কৃষি, সেচ, বনায়ন, যাতায়াত, বিদ্যুতায়ন, খাল, পুকুর, পুনঃখনন বীজ প্রক্রিয়া ও বিপনন ইত্যাদি সমন্বয়ে উন্নয়নের প্যকেজ কার্যক্রম রাজশাহী বিভাগের সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে। বর্তমানে রাজশাহী বিভাগের সমগ্র, অঞ্চল বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের অধিক্ষেত্র পরিসীমাভুক্ত আছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস